আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলের গোপন পরমাণু ঘাঁটিতে হুথিদের ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা! প্রকাশ্যে এলেন ইয়াহিয়া সারি

গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিরোধের বার্তা দিচ্ছে ইয়েমেনের প্রতিরোধ গোষ্ঠী হুথি আনসারুল্লাহ। সম্প্রতি মার্কিন হামলায় হুথিদের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি নিহত হয়েছেন বলে গুজব রটে। কিন্তু এই গুজবকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রমাণ করে নতুন এক ভিডিও বার্তায় আবারও দৃশ্যমান হয়েছেন এই সাহসী নেতা। আর ভিডিওটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।

ইসরায়েলে নতুন মিসাইল হামলার ঘোষণা

রবিবার (১৩ এপ্রিল) প্রকাশিত ভিডিও বার্তায় ইয়াহিয়া সারি জানিয়ে দেন, ইসরায়েলের গোপন পরমাণু ঘাঁটি ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হুথি গোষ্ঠী সফল মিসাইল হামলা চালিয়েছে। গাজাবাসীর প্রতি সংহতি জানিয়ে তিনি বলেন,

“আমাদের প্রতিরোধ চলবে। ফিলিস্তিনিদের রক্ত বৃথা যাবে না। আমরা নিরপরাধ শিশুদের হত্যার জবাব দিতে জানি।”

তিনি বলেন, এই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক হাইপারসনিক মিসাইল — ‘প্যালেস্টাইন-টু’ এবং ‘জুলফিকার’। এই দুটি মিসাইলই যথাযথ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে বলে দাবি করেন তিনি।

ইসরায়েলের পরমাণু ঘাঁটিতে সরাসরি হামলা!

সবচেয়ে বিস্ময়কর দাবি হলো, ‘প্যালেস্টাইন-টু’ মিসাইলটি ইসরায়েলের গোপন একটি পারমাণবিক ঘাঁটিতে সরাসরি আঘাত হানে। এই ঘাঁটি অবস্থিত আশদোতের কাছাকাছি মাইকা অঞ্চলে। ধারণা করা হয়, এখানে ইসরায়েল জেরিকো সিরিজের পরমাণু ওয়ারহেডবাহী মিসাইল সংরক্ষণ করে থাকে। এই হামলার ফলে পরমাণু সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে কার্যক্রম বন্ধ

অন্যদিকে, ‘জুলফিকার’ মিসাইলটি আঘাত হানে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেন গুরিয়নে। এ হামলার পর প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিমানবন্দরের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এতে করে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে বিভ্রাট ও হাজারো যাত্রীর ভোগান্তি তৈরি হয়।

আশকেলন ও তেল আবিবে আতঙ্ক, বাজে সতর্কতা সাইরেন

হামলার সময় ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর—জেরুজালেম, তেল আবিব, আশদোদ, নেতানইয়া প্রভৃতি এলাকায় একটানা সতর্কতা সাইরেন বাজতে থাকে। ভিডিওতে দেখা গেছে, আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছোটাছুটি করছেন। রাস্তায় গাড়ি থেমে যায়, বাজার বন্ধ হয়ে যায় এবং পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে ভয়ানক আতঙ্ক।

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ও ভূপাতিতকরণ দাবি

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হামলার সত্যতা স্বীকার করলেও দাবি করেছে, তারা মিসাইল দুটি ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়—

  • একটি মিসাইল নেগেভ মরুভূমির ওপরেই মার্কিন ‘THAAD’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ধ্বংস করা হয়।
  • অন্য মিসাইলটি ‘Arrow’ ডিফেন্স সিস্টেমের মাধ্যমে আকাশেই থামিয়ে দেওয়া হয়।
    পুলিশ এবং সেনাবাহিনী বর্তমানে মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে। ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, হামলায় কেউ হতাহত হয়নি।

মার্কিন ড্রোন ধ্বংসে হুথিদের সাফল্য

এই ঘটনার পাশাপাশি হুথিরা দাবি করেছে, ইয়েমেনের হাজ্জা অঞ্চলে একটি মার্কিন ‘MQ-9’ ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে এটি চতুর্থ মার্কিন ড্রোন যা হুথিরা ভূপাতিত করল। সারির বক্তব্য অনুযায়ী, গাজার জনগণের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এখন পর্যন্ত ১৯টি মার্কিন ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে।

রেড সি-তে মার্কিন যুদ্ধজাহাজে হামলা

এর আগে ১১ এপ্রিল, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকি উপেক্ষা করে হুথিরা রেড সি-তে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী USS Truman-এ সমন্বিত মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালায়। এই হামলার মাধ্যমে তারা জানিয়ে দেয়,

“আমরা ভয় পাই না, পিছু হটবো না। প্রতিরোধ চলবে যতক্ষণ না ফিলিস্তিন মুক্ত হয়।”

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা ইসরায়েলের জন্য কেবল সামরিক চ্যালেঞ্জ নয়, বরং কূটনৈতিকভাবে একটি বড় বার্তা। গাজা ইস্যুতে এখন বিশ্ব মুসলিম ও স্বাধীনচেতা গোষ্ঠী আরও একত্রিত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্যের দিন শেষ হতে চলেছে—এমন মতও উঠে আসছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button