ভারতের হরিয়ানায় ভেঙে ফেলা হলো অর্ধশতাব্দী পুরোনো মসজিদ – মুসলিমদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও প্রতিবাদ
ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ফরিদাবাদ জেলায় সম্প্রতি একটি অর্ধশতাব্দী পুরোনো মসজিদ ভেঙে ফেলার ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ফরিদাবাদের বড়খাল গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক ‘আকসা মসজিদ’ গত ১৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সকালে প্রশাসনের নির্দেশে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনাটি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
🕌 ৫০ বছরের পুরোনো মসজিদ গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আকসা মসজিদটি প্রায় ৫০ বছর আগে নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটি গ্রাম প্রধানের দেওয়া জমিতে গড়ে উঠেছিল এবং বহু বছর ধরে এলাকাবাসী এখানে নামাজ আদায় করতেন। এটি শুধু একটি উপাসনালয় ছিল না, বরং স্থানীয় মুসলিমদের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।
কিন্তু হঠাৎ করেই ফরিদাবাদ পৌর কর্পোরেশন মসজিদটিকে ‘অবৈধ স্থাপনা’ ঘোষণা করে ভাঙার কাজ শুরু করে। এমনকি প্রশাসনের দাবি, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ীই মসজিদটি ভাঙা হয়েছে। অথচ স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, বিষয়টি এখনো সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।
🚧 নোটিশ ছাড়াই উচ্ছেদ, এলাকাবাসীর ক্ষোভ
মুশতাক নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা বা নোটিশ প্রদান না করেই হঠাৎ করে পুলিশ নিয়ে এসে মসজিদটি ভেঙে ফেলা হয়। তার ভাষায়, “এটা কেবল একটা মসজিদ ভাঙা নয়, এটা আমাদের বিশ্বাস, ইতিহাস ও সম্মানকে আঘাত করার নামান্তর।”
মুশতাক আরও বলেন, “মসজিদটি বহু বছর ধরে সক্রিয় ছিল। রোজ ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হতো, ঈদ, জুমা, মিলাদ—all religious activities এই মসজিদকেন্দ্রিক হতো। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনা ভেঙে ফেলার পেছনে যে গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে, তা স্পষ্ট।”
👮♂️ প্রচুর পুলিশ মোতায়েন, ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ঘটনার দিন পুরো এলাকা ছিল টানটান উত্তেজনায় ভরা। মসজিদ ভাঙার সময় ফরিদাবাদ পুলিশের তিনজন সহকারী কমিশনারসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়, সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তারপর বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় আকসা মসজিদ।
এই গোটা ঘটনাটিকে স্থানীয়রা ‘পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেই মনে করছেন।
📢 প্রতিবাদ ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর বড়খাল গ্রামসহ আশেপাশের এলাকায় প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন প্রশাসনের এই আচরণের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ মিছিল করেছেন।
এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, যখন বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিবেচনায় রয়েছে, তখন প্রশাসন কীভাবে এমন তড়িঘড়ি পদক্ষেপ নিতে পারে? মানবাধিকার কর্মী ও নাগরিক সমাজ এই ঘটনাকে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর আঘাত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
🧠 রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও প্রশ্ন
হরিয়ানা রাজ্যে বর্তমানে উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে। বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমদের উপাসনালয়, কবরস্থান ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর ওপর এমন আগ্রাসী হামলার অভিযোগ বাড়ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি এমন আচরণ ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের মৌলিক চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধুমাত্র একটি উচ্ছেদ নয়, বরং এটি ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলা চাপ ও নিপীড়নের আরেকটি বহিঃপ্রকাশ।