আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশের কল্যাণে ভারত সবচেয়ে আন্তরিক: জয়শঙ্করের মন্তব্যে কূটনৈতিক বার্তা

বাংলাদেশের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল ও কল্যাণে ভারতের মতো আন্তরিক আর কোনো দেশ নেই— এমন দাবি করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের প্রতি ভারতের শুভকামনা কেবল রাজনৈতিক আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি আমাদের রক্তে, আমাদের ডিএনএতেই রয়েছে।”

বুধবার (৯ এপ্রিল) নয়াদিল্লিতে আয়োজিত নিউজ১৮ ফ্ল্যাগশিপ রাইজিং ইন্ডিয়া সামিট ২০২৫-এর দ্বিতীয় দিনে ভাষণ দিতে গিয়ে জয়শঙ্কর এসব কথা বলেন।

ভারতের বহুল পরিচিত সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, অনুষ্ঠানে জয়শঙ্কর বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেন যে, “নয়াদিল্লি চায়, বাংলাদেশের অগ্রগতি হোক স্থিতিশীল, অংশগ্রহণমূলক ও টেকসই ভিত্তির উপর।”

তিনি আরও বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক কেবলমাত্র কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, এটি জনগণের সাথে জনগণের বন্ধন। এই সম্পর্ক বহু দশকের পুরোনো এবং একে জনভিত্তিক সম্পর্ক বললেও কম বলা হয়। ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মঙ্গল কামনায় এত আন্তরিক, এত নিবেদিত অন্য কোনো রাষ্ট্র নেই। এটা ভারতের আত্মার অংশ।”

মোদী-ইউনূস সাক্ষাৎ এবং পারিপার্শ্বিক বার্তা

সম্প্রতি থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাৎ হয়। ঐ আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়টি প্রাধান্য পায়।

জয়শঙ্কর সেই সাক্ষাতের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অতুলনীয় এবং ঐতিহাসিক। এটি নিছক রাজনৈতিক নয়, বরং সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও মানবিকভাবে প্রোথিত। এই সম্পর্কের শক্ত ভিত্তির জন্যই ভারত সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।”

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের উদ্বেগ

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি, বিশেষ করে মৌলবাদী প্রবণতা, সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা এবং গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে প্রকাশ্যে উদ্বেগ জানিয়েছেন জয়শঙ্কর।

তিনি বলেন, “আমরা যা দেখছি, তা আমাদের চিন্তিত করছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যেসব হামলার খবর আসছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এসব বিষয়ে আমরা খোলাখুলি কথা বলছি এবং এভাবেই আমাদের বন্ধুত্বের সত্যিকার পরিচয় প্রকাশ পাচ্ছে।”

নির্বাচনের বিষয়ে প্রত্যাশা

বাংলাদেশে অচিরেই অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের অধিকারী একটি রাষ্ট্র হিসেবে নির্বাচনই জনগণের রায় প্রকাশের একমাত্র বৈধ মাধ্যম। সেই কারণেই আমরা আশা করি, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ গণতন্ত্রের পথেই চলবে এবং জনগণের ইচ্ছাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে।”

বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ বার্তা

জয়শঙ্কর তার বক্তব্যে আবারও জোর দিয়ে বলেন, “ভারতের মতো বন্ধু বাংলাদেশের আর একটিও নেই, যারা এতোটা আন্তরিকভাবে তাদের শুভকামনা করে। এটি ভারতের ডিএনএতে রয়েছে, এবং এই বন্ধুত্ব আমরা সম্মানের সাথেই রক্ষা করব।”

তাঁর এই বক্তব্যকে ঘিরে আলোচনার জন্ম দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক অঙ্গনে, যেখানে ভারতের ভূমিকাকে অনেকেই বিশেষভাবে দেখছেন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও কূটনীতির নির্ধারক হিসেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button