আন্তর্জাতিক

সর্বোচ্চ সতর্কতায় ইরান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে দিল প্রকাশ্য হুমকি

মধ্যপ্রাচ্যের ভঙ্গুর নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও একবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এ বার সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে গেছে ইরান। একইসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রতি সরাসরি প্রকাশ্য হুমকি উচ্চারণ করেছে দেশটি। এমনটা জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ইয়েদিওথ আহরোনোথ।

সোমবার (১ এপ্রিল) ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এক বিবৃতিতে জানান, দেশের সামরিক বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, “ইরানের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুত। যেকোনো বহিরাগত হুমকির কঠোর জবাব দিতে প্রস্তুত ইরানি জাতি ও সেনাবাহিনী।”

শুধু যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোকেও সতর্ক করলো তেহরান

ইরানের এই সতর্কবার্তা কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দিকেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। দেশটির পক্ষ থেকে ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), কাতার, তুরস্ক এবং বাহরাইনের মতো প্রতিবেশী মুসলিম দেশগুলোকেও সরাসরি সতর্ক করা হয়েছে।

তেহরানের দাবি, যদি কোনো প্রতিবেশী দেশ তাদের আকাশসীমা বা ভূখণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের কাজে ব্যবহারের অনুমতি দেয়, তবে তা ইরান শত্রুতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করবে। এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে সেই দেশকে এর ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।

ইরানের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, “আমাদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র বা আক্রমণের ক্ষেত্রে সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকা কঠিনভাবে মূল্যায়ন করা হবে। আমরা কারো সঙ্গে সংঘাতে যেতে চাই না, তবে দেশের নিরাপত্তা ও মর্যাদার প্রশ্নে কোনো আপস নেই।”

খামেনির নেতৃত্বে সর্বোচ্চ সতর্কতায় সেনাবাহিনী

বিবৃতিতে খামেনি তার সশস্ত্র বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেনাবাহিনী, বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (ইরানি রেভোলিউশনারি গার্ড) এবং গোয়েন্দা বিভাগগুলোকে একযোগে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সতর্ক বার্তা ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইরান যুদ্ধের জন্য সরাসরি প্রস্তুতি নিচ্ছে, বিশেষ করে যদি যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের দিক থেকে আক্রমণের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

আঞ্চলিক উত্তেজনার ঝুঁকিতে জর্জরিত মধ্যপ্রাচ্য

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জটিল এবং সাম্প্রতিক ফিলিস্তিন-গাজা সংকটে ইরান ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকার বার্তা বারবার দিয়েছে।

বর্তমানে অঞ্চলজুড়ে যে ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে, তার মধ্যে ইরানের এই হুমকি নতুন করে উত্তেজনার পারদ চড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট যদি সামরিক সংঘর্ষে রূপ নেয়, তাহলে তার প্রভাব শুধু ইরান-যুক্তরাষ্ট্রে সীমাবদ্ধ থাকবে না—পুরো মধ্যপ্রাচ্যই সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিশেষ করে যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে বা মার্কিন ঘাঁটি স্থাপন করেছে—তাদের জন্য ঝুঁকি আরও বেশি। কারণ ইরান স্পষ্ট করে দিয়েছে, এ ধরনের সহযোগিতাকে ‘শত্রুতামূলক কাজ’ হিসেবে দেখা হবে।

শেষ কথা

বিশ্ব রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইরানের এই কড়া অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই উত্তেজনা যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে তা হতে পারে আরেকটি বড় আঞ্চলিক যুদ্ধের সূত্রপাত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button