পরীক্ষা কেন্দ্রে স্মার্টফোন ব্যবহার: সাভারে ৭ পর্যবেক্ষক বহিষ্কার, কেন্দ্র সচিবকেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি
ঢাকার সাভারে এসএসসি পরীক্ষার সময় কেন্দ্রের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও বোর্ডের কঠোর নিয়ম লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। গণিত বিষয়ের পরীক্ষাকালীন সাভার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে স্মার্টফোনসহ উপস্থিত ছিলেন একাধিক শিক্ষক-পর্যবেক্ষক, যেটি সরাসরি বোর্ডের পরীক্ষানীতিমালার পরিপন্থী। ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে নজরে এনে ব্যবস্থা নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু বকর সরকার।
📱 পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল! ধরা পড়লেন ৭ শিক্ষক
সোমবার (২১ এপ্রিল) এসএসসি-২০২৫ এর গণিত পরীক্ষার দিন সাভার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে যান ইউএনও আবু বকর সরকার। পরিদর্শনের সময় তিনি পরীক্ষা চলাকালেই কয়েকজন শিক্ষককে স্মার্টফোনসহ হাতেনাতে ধরেন। এরপর তিনি সঙ্গে সঙ্গেই তাদের পরীক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন।
ইউএনও স্বাক্ষরিত এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাভার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক সহকারী শিক্ষক এনাম আহম্মেদ এবং আনিছ মেমোরিয়াল স্কুলের সহকারী শিক্ষক তমাল হোসেন মোবাইল ফোনসহ পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। যা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ এবং পরীক্ষার গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
⚠️ গাফিলতির দায়ে আরও ৫ জন বহিষ্কৃত
পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগে আরও পাঁচজন সহকারী শিক্ষককে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করা হয়। তারা হলেন:
- বেগুনবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আল মাহমুদ
- গোপালবাড়ী নবীন প্রগতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক কামরুন্নাহার রুমি
- বাড্ডা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মো. ইমরান হোসেন
- ভাকুর্তা ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক নুপুর মল্লিক
- একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক রাশিদা বেগম
এই শিক্ষকরা দায়িত্ব পালনের সময় পরীক্ষার নিয়মনীতি অনুসরণ না করে কেন্দ্রে শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো গুরুতর অপরাধে যুক্ত ছিলেন বলে জানানো হয়।
🧑🏫 কেন্দ্র সচিবকেও অব্যাহতি, নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মনোয়ারা আক্তার
শুধু শিক্ষক পর্যবেক্ষকরাই নয়, দায়িত্ব পালনে চরম গাফিলতির কারণে সাভার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র-২ এর কেন্দ্র সচিব এসএম রফিকুজ্জামানকেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার স্থলে নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাভার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মনোয়ারা আক্তারকে।
🗣️ কী বললেন প্রধান শিক্ষক ও ইউএনও?
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে, সাভার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং বহিষ্কৃত কেন্দ্র সচিব এসএম রফিকুজ্জামান জানান, “পর্যবেক্ষকদের বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও তারা মোবাইল নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন। আমি তাদের সাবধান করেছিলাম, কিন্তু তারা কথা শোনেননি। ফলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।”
এদিকে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আবু বকর সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, “পরীক্ষা একটি স্পর্শকাতর এবং গোপনীয় বিষয়। এখানে কোনো অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। যারা স্মার্টফোন নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন এবং দায়িত্বে গাফিলতি করেছেন, তারা আর কোনো এসএসসি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।”
🛑 সতর্ক বার্তা প্রশাসনের
ইউএনও আরও বলেন, “এই ধরণের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সে জন্য আমরা কঠোর নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছি। পরীক্ষার স্বচ্ছতা এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”